সমাপনী

আমি যা ভাবি তা’ করতে পারি না, যা করি তা’ ভাবি না। প্রতিদিন বিবেকের সাথে লড়াই করতে করতে হেরে যাই। প্রতিদিন এভাবে বিবেকের সাথে হারতে থাকলে আমার কি কোন সত্ত্বা থাকে?
আমার কাছে একটা জিনিষ স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, একটা সমাজব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে মানুষের চিন্তা-চেতনা বা চরিত্র গড়ে উঠে। আর যারা চাকুরী করে তাঁদের অধিকাংশেরই বিবেক বলতে কিছুই থাকে না। তার উপরওয়ালা যা বলে তা করতে হয় প্রতি মুহূর্তে-এর বাইরে কিছু করতে চাইলে তার চাকুরী থাকে না বা প্রমোশন হবে না। তার ওপরের বস যদি তাকে ভাল বলে তাহলে সে ভাল নতুবা ভাল না। এ সমাজে কাজের বিচার হয় না, বিচার হয় তার বসের কতটুকো মন রক্ষা করতে পারলো।
বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ কেউ কাকে বিশ্বাস করে না। পুঁজিবাদী সমাজে বিশ্বাস বলতে কিছু নেই। কাজ দিয়ে বিচার করতে হয়। একবার একটা লোক যদি বিশ্বাস ভঙ্গ করে ফেলে, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না। অনেকে বাধ্য হয় বিশ্বাস ভঙ্গ করতে। তা‘প্রমাণ করতে পারলে তাকে ক্ষমা করা যায়, একবার কি দু‘বার, তিনবারের মাথায় নয়। আমি যা করতে চাই তা‘করতে পারলে আমার স্বাধীনতা আছে বা আমি স্বাধীন মানুষ। কিন্তু আমার কাজ এমন হবে না যা অপরের জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আর আসবো না।
চাকুরী করা চাকর খাটার সমান। কেউ বড় চাকর, কেউ ছোট চাকর। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ যা বলে তা করে না, আর যা করে তা‘বলে না। আমিও আমার জীবনের সাথে আপস করে করে এ পর্যন্ত এসেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমার দ্বারা এ পৃথিবীতে কিছু হবে বলে মনে হয় না। আর কিছু করতে হলে প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যার শত্র“ নেই তার কোন মিত্রও নেই। যার শত্র“ আছে তার মিত্রও আছে। সমাজে সৎ এবং অসতের লড়াই চলে। আর জোর যার মুলুক তার। সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামোর সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সৎভাবে চাকুরী করলে সম্পদের মালিক হওয়া যায় না। আমাদের দেশে সৎভাবে সম্পদের মালিক হওয়া কঠিন কাজ। সমাজের কিছু মানুষের লক্ষ্য একই, কিভাবে সম্পদের মালিক হওয়া যায়। কিভাবে ভবিষ্যৎ সুন্দর করা যায়। সমাজে অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য জোর প্রতিযোগিতা চলছে। সম্পদের মালিক হতে হলে ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হলে সহজে সম্পদের মালিক হওয়া যায়। আমাদের দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ গরীব ও শোষিত। তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। আমাদের দেশের কিছু লোকের নিকট সম্পদ জমা হচ্ছে। আর সমগ্র দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার গ্যারান্টি নেই। যে সম্পদ মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগানো হয়না-সে সম্পদ দেশে অপচয় বাড়ায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন-মানের অবনতি ঘটায়। এদেশে কিছু মানুষের ভোগবিলাসের সীমাপরিসীমা নেই। আর অন্যদিকে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ চরম দুঃখ দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছে। তাদের ভবিষ্যত বলতে কিছু নেই। এক মানুষ আরেক মানুষের উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজে বৈধভাবে সম্পদের মালিক হওয়া যায় না। শ্রমজীবী মানুষ নিজেকে চালাক মনে করে। আসলে আমাদের সমাজের বেশীর ভাগ মানুষই বোকা। কিন্তু দেশের বেশীরভাগ মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা রাখা যাবে না। আমার বিশ্বাস এক সময় দেশের ৯০ ভাগ মানুষ জেগে উঠবে।
আমার ছোট সময়ের স্মৃতিগুলি মনে হয় বারবার। মরতে চাইনা তবু মরতে হবে। চিরন্তন বলে কোন কিছু নেই, সবকিছুই রূপান্তর। সমাজের নিয়ম হলো উৎপাদন ও পুনঃউৎপাদন। নিরপেক্ষ বলতে কোন বস্তু নেই এ পৃথিবীতে এবং ৫০(পঞ্চাশ), ৫০(পঞ্চাশ) বলতে কোন বস্তু নেই, ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং তা প্রমাণ করেছে। আমি কিছু একটা করতে চাই। কিন্তু কি করব তা স্পষ্ট করে বলতে পারি না। রাজনীতি করা মহান কাজ। যদি সাম্যের রাজনীতি হয়। সকল শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে রাজনীতি করা মহান কাজ। মানুষের মাঝে সাম্য আনা শ্রেষ্ঠ কাজ। আমার মাঝে এ দেশের আসল চিত্রগুলি বারবার ভেসে উঠে। গ্রাম এবং শহরের গরীব মানুষের মুখের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি তাদের চাহিদা কি। তাদের চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা-এর বেশী কিছু নয়। আমাদের দেশে যে সম্পদ আছে তাদিয়ে বাংলাদেশের ১৭(সতের) কোটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা-এ সব মৌলিক চাহিদার গ্যারান্টি দেয়া যায়। তখনই আমাদের দেশের প্রত্যেক মানুষ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হবে। নতুবা মুক্তিযুদ্ধের অর্থ বা এ স্বাধীনতার অর্থ ফাঁকাবুলি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রত্যেকটা মানুষের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। কোন জিনিসই বিচ্ছিন্ন নয়। আমাদের গ্রামের উন্নয়ন হতে হলে আমাদের ইউনিয়নের উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের ইউনিয়নের উন্নয়ন হতে হলে আমাদের উপজেলার উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের উপজেলার উন্নয়ন হতে হলে আমাদের জেলার উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের জেলার উন্নয়ন হতে হলে আমাদের বিভাগের উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের বিভাগের উন্নয়ন হতে হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হতে হবে নতুবা কিছুই সম্ভব নয়। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তবু বাংলাদেশের একটি আলাদা বর্ডার বা সীমানা আছে। এ সীমানা বাংলাদেশকে পৃথিবী থেকে আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাষ্ট্র হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য রাষ্ট্র থেকে আলাদা। আর যতদিন পৃথিবীতে শোষণ টিকে থাকবে, ততদিন রাষ্ট্রের অবসান হবে না। আমরা মায়ের পেট থেকে কেউ সম্পদ নিয়ে আসিনি। শ্রমজীবী মানুষের উৎপাদিত সম্পদ শোষণ আর অসম বিনিময়ের মাধ্যমে বুর্জোয়ারা তার মালিক হয়েছে। যে যায়গায় মানুষ আছে-সে যায়গায় খাদ্য আছে। যে যায়গায় খাদ্য আছে-সে যায়গায় মানুষ আছে। বেশীরভাগ মানুষ বলে খাদ্যের অভাবে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, আসলেই কি কথাটা তাই? যদি খাদ্যের অভাবে মানুষগুলো মারা যেত-তা‘হলে সবগুলো মানুষই মারা যেত। আসলে কথাটা হবে ক্রয়-ক্ষমতার অভাবে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে। ক্রয়-ক্ষমতা নাই কেন? কিছু মানুষ দ্বারা ব্যাপক মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয় বলে। ধনীরা ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করে দুর্ভিক্ষ। সম্পদের সুষম বন্টন করা হলে-কেউ না খেয়ে মারা যেতো না। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যা কিছু হয়-সবকিছুর জন্য দায়ী ধনীরা। ধনীদের অপচয় বন্ধ করতে পারলে এ দেশে কেউ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার অভাবে মৃত্যুবরণ করতো না বা কাজের আশায় কাউকে আজ বিদেশে যেতে হতো না বা কেউ এদেশে বেকার থাকত না। ধনীরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য গরীবদের শাসন-শোষণ করছে। এ অন্যায় বৈষম্য যারা সৃষ্টি করেছে তারা অপরাধী। স্বার্থপর শাসক ও বিলাসী ধনীদের সৃষ্টি এ বৈষম্য মেনে নেওয়াও এক ধরনের অপরাধ। এ অন্যায় বৈষম্য দূর করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। বেশীরভাগ মানুষ বলে যে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসলে দেশ শান্তির পথে চলবে কিন্তু আমি বলি যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার পূর্বশর্ত হল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি না আসলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও আসবে না।
মোঃ জাকির হুসেন(আলমগীর)

মোঃ জাকির হুসেন(আলমগীর)-এর জন্ম ১ নভেম্বর, ১৯৪৮ সালে নানাবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার আহমদপুর চৌধুরীবাড়িতে। শৈশব কেটেছে দাদাবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভেলানগর বড়বাড়িতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। এস.এস.সি. পাশের পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে-এ ভর্তি হয়ে পড়া-লেখা করা হয়নি। ঢাকায় আসেন ১৯৬৬-তে।
১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন-এ অংশগ্রহণ করেন। প্রায় প্রতিদিন মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ ও ভাসানী ন্যাপের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। তারপর ১৯৭৯ সাল থেকে জনমুক্তি পার্টির বক্তব্যের সাথে একমত। ২০০২ সালে জীবনে প্রথম রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতি‘র বার্ষিক স্মরণিকাতে ২টি লেখা ছাপা হয় তারপর ২০০৩ সালে বড়বাড়ি প্রকাশনীর মাধ্যমে ‘‘ভেলানগর বড়বাড়ির বংশ পরিচিতি ও দেশ-বিদেশের তথ্য’’ এবং ২০০৫ সালে রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯০-বছর পূর্তির স্মরণিকাতে দুটি লেখা ছাপা হয়। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারিতে জাকির হুসেন (আলমগীর) আর্থ-সামাজিক গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। এ গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণা করা হয়। পৃথিবীর ২৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা বা পৃথিবীর ২০০ জাতির মধ্যে বাংলাদেশের স্থান কোন যায়গায়। পৃথিবীর লোকসংখ্যার ৪৩ ভাগের ১ ভাগ লোক বাংলাদেশে বাস করে। পৃথিবীতে লোকসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ৭ম স্থানে এবং অর্থনীতির আকারে ৫৬তম স্থানে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কিভাবে উজ্জ্বল করা যায়। এ ধরনের গবেষণা করা হয়।
(১) ১৭৮০-২০০৩ সাল পর্যন্ত ভেলানগর বড়বাড়ির বংশ পরিচিতি ও দেশ-বিদেশের তথ্য
(২) ১৮০৬-২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর, জিয়ান বড়বাড়ি প্রকাশনীর মাধ্যমে ‘‘আহমদপুর চৌধুরীবাড়ির বংশ পরিচিতি ও চৌধুরী শামসুন নাহার বেগমের আত্মীয়-স্বজন’’
(৩) ১৭৪০-২০০৭ সালের জুলাই মাসে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তথ্যাবলী
(৪) ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জিয়ান বড়বাড়ি প্রকাশনীর মাধ্যমে ‘‘আমার দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৮-২০০৮)-এ বইটিও প্রকাশিত
(৫) ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল, ‘‘ভেলানগর বড়বাড়ির বংশ পরিচিতি(১৭৮০-২০১০)’’-এর দ্বিতীয় সংস্করণটিও
(৬) ‘‘দেশ-বিদেশের স্মরণীয় কিছ লোকের নাম জন্ম ও মৃত্যু’’
(৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১-২০১৩ ও আমার দেখা ১৯৬৮ থেকে
(৮) ‘বিশ্ব ও দেশ-বিদেশের তথ্য’
(৯) ‘ভেলানগর গ্রামের ইতিহাস’ (১৭৪০-২০১৩)
(১০) বাংলাদেশের কিছু কিছু ঘটনা ও তথ্য
(১১) ১৭৫৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ও পাকিস্তÍান আমলে এ দেশে কয়টি মাদ্রাসা, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে-নাম, সন তারিখ দিয়ে একটি বই রচনা করা হয়েছে এবং এ বইটি আমার ১১ নম্বর বই।
(১২) এ পৃথিবীর চেনা-জানা মানুষ এবং এ বইটি আমার ১২ নম্বর বই।
(১৩) বিশ্ব ও দেশ-বিদেশের তথ্য ঃ (পার্ট-২) এ বইটিরও কাজ চলছে।
(১৪) খেয়া পত্রিকার কিছু লেখার সংকলন দিয়ে একটি বই রচনার কাজ চলছে
(১৫) আমার দেখা ঢাকা-এ বইটিরও কাজ চলছে
(১৬) মোঃ জাকির হুসেন আলমগীরের আত্মজীবনী-এ বইটিরও কাজ চলছে।
তাঁর স্বপ্ন বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার গ্যারান্টি দেয়া। এর বেশি কিছু তাঁর চাওয়া-পাওয়া নেই।