আমি যা ভাবি তা’ করতে পারি না, যা করি তা’ ভাবি না। প্রতিদিন বিবেকের সাথে লড়াই করতে করতে হেরে যাই। প্রতিদিন এভাবে বিবেকের সাথে হারতে থাকলে আমার কি কোন সত্ত¡া থাকে? আমার কাছে একটা জিনিষ স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, একটা সমাজব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে মানুষের চিন্তা-চেতনা বা চরিত্র গড়ে উঠে। আর যারা চাকুরী করে তাঁদের অধিকাংশেরই বিবেক বলতে কিছুই থাকে না। তার উপরওয়ালা যা বলে তা করতে হয় প্রতি মুহূর্তে-এর বাইরে কিছু করতে চাইলে তার চাকুরী থাকে না বা প্রমোশন হবে না। তার ওপরের বস যদি তাকে ভাল বলে তাহলে সে ভাল নতুবা ভাল না। এ সমাজে কাজের বিচার হয় না, বিচার হয় তার বসের কতটুকো মন রক্ষা করতে পারলো। বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ কেউ কাকে বিশ্বাস করে না। পুঁজিবাদী সমাজে বিশ্বাস বলতে কিছু নেই। কাজ দিয়ে বিচার করতে হয়। একবার একটা লোক যদি বিশ্বাস ভঙ্গ করে ফেলে, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না। অনেকে বাধ্য হয় বিশ্বাস ভঙ্গ করতে। তা‘প্রমাণ করতে পারলে তাকে ক্ষমা করা যায়, একবার কি দু‘বার, তিনবারের মাথায় নয়। আমি যা করতে চাই তা‘করতে পারলে আমার স্বাধীনতা আছে বা আমি স্বাধীন মানুষ। কিন্তু আমার কাজ এমন হবে না যা অপরের জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আর আসবো না।
চাকুরী করা চাকর খাটার সমান। কেউ বড় চাকর, কেউ ছোট চাকর। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ যা বলে তা করে না, আর যা করে তা‘বলে না। আমিও আমার জীবনের সাথে আপস করে করে এ পর্যন্ত এসেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমার দ্বারা এ পৃথিবীতে কিছু হবে বলে মনে হয় না। আর কিছু করতে হলে প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যার শত্রæ নেই তার কোন মিত্রও নেই। যার শত্রæ আছে তার মিত্রও আছে। সমাজে সৎ এবং অসতের লড়াই চলে। আর জোর যার মুল্লুক তার। সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামোর সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সৎভাবে চাকুরী করলে সম্পদের মালিক হওয়া যায় না। আমাদের দেশে সৎভাবে সম্পদের মালিক হওয়া কঠিন কাজ। সমাজের কিছু মানুষের লক্ষ্য একই, কিভাবে সম্পদের মালিক হওয়া যায়। কিভাবে ভবিষ্যৎ সুন্দর করা যায়। সমাজে অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য জোর প্রতিযোগিতা চলছে। সম্পদের মালিক হতে হলে ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হলে সহজে সম্পদের মালিক হওয়া যায়। আমাদের দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ গরীব ও শোষিত। তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। আমাদের দেশের কিছু লোকের নিকট সম্পদ জমা হচ্ছে। আর সমগ্র দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার গ্যারান্টি নেই। যে সম্পদ মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগানো হয়না-সে সম্পদ দেশে অপচয় বাড়ায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন-মানের অবনতি ঘটায়। এদেশে কিছু মানুষের ভোগবিলাসের সীমাপরিসীমা নেই। আর অন্যদিকে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ চরম দুঃখ দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছে। তাদের ভবিষ্যত বলতে কিছু নেই। এক মানুষ আরেক মানুষের উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজে বৈধভাবে সম্পদের মালিক হওয়া যায় না। শ্রমজীবী মানুষ নিজেকে চালাক মনে করে। আসলে আমাদের সমাজের বেশীর ভাগ মানুষই বোকা। কিন্তু দেশের বেশীরভাগ মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা রাখা যাবে না। আমার বিশ্বাস এক সময় দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ জেগে উঠবে।
আমার ছোট সময়ের স্মৃতিগুলি মনে হয় বারবার। মরতে চাইনা তবু মরতে হবে। চিরন্তন বলে কোন কিছু নেই, সবকিছুই রূপান্তর। সমাজের নিয়ম হলো উৎপাদন ও পুনঃউৎপাদন। নিরপেক্ষ বলতে কোন বস্তু নেই এ পৃথিবীতে এবং ৫০(পঞ্চাশ), ৫০(পঞ্চাশ) বলতে কোন বস্তু নেই, ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং তা প্রমাণ করেছে। আমি কিছু একটা করতে চাই। কিন্তু কী করব তা স্পষ্ট করে বলতে পারি না। রাজনীতি করা মহান কাজ। যদি সাম্যের রাজনীতি হয়। সকল শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে রাজনীতি করা মহান কাজ। মানুষের মাঝে সাম্য আনা শ্রেষ্ঠ কাজ। আমার মাঝে এ দেশের আসল চিত্রগুলি বারবার ভেসে উঠে। গ্রাম এবং শহরের গরীব মানুষের মুখের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি তাদের চাহিদা কি। তাদের চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা-এর বেশী কিছু নয়। আমাদের দেশে যে সম্পদ আছে তাদিয়ে বাংলাদেশের ১৭(সতের) কোটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা-এ সব মৌলিক চাহিদার গ্যারান্টি দেয়া যায়। তখনই আমাদের দেশের প্রত্যেক মানুষ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হবে। নতুবা মুক্তিযুদ্ধের অর্থ বা এ স্বাধীনতার অর্থ ফাঁকাবুলি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রত্যেকটা মানুষের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। কোন বিষয়ই বিচ্ছিন্ন নয়। আমাদের গ্রামের উন্নয়ন হতে হলে আমাদের ইউনিয়নের উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের ইউনিয়নের উন্নয়ন হতে হলে আমাদের উপজেলার উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের উপজেলার উন্নয়ন হতে হলে আমাদের জেলার উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের জেলার উন্নয়ন হতে হলে আমাদের বিভাগের উন্নয়ন হতে হবে, আমাদের বিভাগের উন্নয়ন হতে হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হতে হবে নতুবা কিছুই সম্ভব নয়। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তবু বাংলাদেশের একটি আলাদা বর্ডার বা সীমানা আছে। এ সীমানা বাংলাদেশকে পৃথিবী থেকে আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাষ্ট্র হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য রাষ্ট্র থেকে আলাদা। আর যতদিন পৃথিবীতে শোষণ টিকে থাকবে, ততদিন রাষ্ট্রের অবসান হবে না। আমরা মায়ের পেট থেকে কেউ সম্পদ নিয়ে আসিনি। শ্রমজীবী মানুষের উৎপাদিত সম্পদ শোষণ আর অসম বিনিময়ের মাধ্যমে বুর্জোয়ারা তার মালিক হয়েছে। যে যায়গায় মানুষ আছে-সে যায়গায় খাদ্য আছে। যে যায়গায় খাদ্য আছে-সে যায়গায় মানুষ আছে। বেশীরভাগ মানুষ বলে খাদ্যের অভাবে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, আসলেই কি কথাটা তাই? যদি খাদ্যের অভাবে মানুষগুলো মারা যেত-তা‘হলে সবগুলো মানুষই মারা যেত। আসলে কথাটা হবে ক্রয়-ক্ষমতার অভাবে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে। ক্রয়-ক্ষমতা নাই কেন? কিছু মানুষ দ্বারা ব্যাপক মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয় বলে। ধনীরা ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করে দুর্ভিক্ষ। সম্পদের সুষম বন্টন করা হলে-কেউ না খেয়ে মারা যেতো না। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যা কিছু হয়-সবকিছুর জন্য দায়ী ধনীরা। ধনীদের অপচয় বন্ধ করতে পারলে এ দেশে কেউ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার অভাবে মৃত্যুবরণ করতো না বা কাজের আশায় কাউকে আজ বিদেশে যেতে হতো না বা কেউ এদেশে বেকার থাকত না। ধনীরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য গরীবদের শাসন-শোষণ করছে। এ অন্যায় বৈষম্য যারা সৃষ্টি করেছে তারা অপরাধী। স্বার্থপর শাসক ও বিলাসী ধনীদের সৃষ্টি এ বৈষম্য মেনে নেওয়াও এক ধরনের অপরাধ। এ অন্যায় বৈষম্য দূর করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। বেশীরভাগ মানুষ বলে যে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসলে দেশ শান্তির পথে চলবে কিন্তু আমি বলি যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার পূর্বশর্ত হল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি না আসলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও আসবে না।
মো: জাকির হুসেন ওরফে আলমগীর, ডেপুটি রেজিস্ট্রার(অবসর), ঢাকা বিশ্ববিদালয়। গ্রাম-ভেলানগর(বড়বাড়ি)।
Category: inspiration
ম্যানিফেস্টো নির্বাচন উপলক্ষে জনগণের বিবেচনার জন্য ঃ
‘‘জনগণকে ঘোষণা দিতে হবে যে, দেশ যতদিন অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও আত্মনির্ভর না হচ্চে এবং সবার জন্য পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানুষের বসবাসের উপযোগী বাসাবাড়ি, আধুণিক চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি না হচ্চে ততদিন সরকারকে ভোগবিলাসে স¤পদের অপচয় নিষিদ্ধ রাখতে হবে। জনগণের অপরিহার্যভোগের চাহিদা পূরণ করার পর দেশে উৎপাদিত স¤পদ, প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা ও বিদেশী সাহায্য দিয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো, প্রচুর শিল্প-কারখানা ও উনত কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশের বাজার ভারতীয় পণ্য ও অন্যান্য বিদেশী পণ্য থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ ঘোষণার ব্স্তাবায়ন ছাড়া কোন দল সরকারী ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ক্ষমতাপ্রত্যাশী প্রতিটি দলকে এ ঘোষণা দিতে হবে। ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে এটাই হবে জনগণের নির্বাচনী ঘোষণা বা ম্যানিফেস্টো।”
আমাদের দেশের জনগণ আজকে ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন। বেকারত্ত¡ , দারিদ্র, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, আয়ের তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্রের অতিরিক্ত দাম, ক্ষমতা ও ধন-স¤পদ কুক্ষিগত করার জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে হানাহানি, সন্ত্রাস, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, দুনীর্তি, চাঁদাবাজি, খুন-চুরি ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি-বিদেশে শিশু ও নারী পাচার, নারী ও শিশু নির্যাতন ইত্যাদি বাংলাদেশের নিত্যদিনের ব্যাপার। সব দেশের মানুষের কাছে নিজের দেশ খুবই প্রিয়। মানুষ নিজের দেশে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতি পরিবেশের মধ্যে থাকতেই ভালবাসে। কিন্তু, আজকের বাংলাদেশ যেন বসবাসের অনুপযুক্ত। জনগণ দিশেহারা। মানুষের কাছে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেই মনে হয়। ফলে তরুণরা বিদেশে পাড়ি দিতেই আগ্রহী। তারা মনে করে বিদেশে যেতে পারলেই তাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়ে উঠবে। কিন্তু, একটা দেশের সব মানুষত আর বিদেশে যেতে পারে না। জনগণের একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ বিদেশে গিয়ে নিজেদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরী করতে পারে। বাদবাকী আপামর জনগণের ভবিষ্যৎ দেশের ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আপামর জনগণ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এম.পি., রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী ও দেশের কোটিপতি ধনীসহ যাদের বিদেশে বিষয়-সম্পত্তি আছে অথবা বিদেশী ব্যাংকে বিশাল অংকের টাকা জমা আছে, বিদেশে ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা ও বসবাস করে তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন চিন্তা নেই। অবস্থা বেগতিক দেখলে তারা যখন ইচ্ছা তখন বিদেশে পাড়ি দিতে পারে। আমাদের দেশ যদি উন্নত হয় তা’হলে বিদেশে না গিয়েও এদেশেই সবার জন্য মোটামোটি একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভভব। কীভাবে এদেশকে উন্নত করা যায় অথবা আদৌ এদেশকে উন্নত করা সম্ভব কিনা সেটাই প্রশ্ন। এ প্রশের উত্তর এদেশের মানুষ জানে না। তাই মানুষ দিশেহারা।
আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আর বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, এরকম মনে করা ভুল। আমরা আজকে যে সংকটের সম্মুখীন পৃথিবীর অনেক দেশ তার চেয়েও বড় সংকট ও দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। জাপান ও জার্মানীর কথাই ধরা যাক। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) এ দুইটি দেশ ধবংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। দিনরাত ইংরেজ ও আমেরিকানদের বোমাবর্ষণের ফলে জার্মানীর সব শহরই মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। শহরের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ সব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো(যেমন-সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, বিমান-বন্দর, রেলপথ, সড়ক, সেতু, বাঁধ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি) ও সব ধরণের শিল্প-কারখানা ধবংস হয়ে গিয়েছিল। আমেরিকানরা এ্যাটম বোমা মেরে জাপানের দুইটি শহরকে একেবারে নিশ্চিহ করে দিয়েছিল। জাপানের রাজধানী টোকিওতে আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলা হয়েছিল। যুন্ধের পর এ দুই দেশ কর্মক্ষম মানুষ, বিশেষ করে কর্মক্ষম পুরুষ মানুষের তীব্র অভাব দেখা দেয়। যুদ্ধে এ দুই দেশের কোটি কোটি মানুষ মারা যায় অথবা পুঙ্গ হয়ে পড়ে। অথচ, যুদ্ধের পর মাত্র দশ বছরের মধ্যে এ দুই দেশ যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠে আক্ষরিক অর্থেই ধবংসস্তুপের নীচ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল। আজকের বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকার পরেই জাপান ও জার্মনীর স্থান। আজ থেকে অর্ধ শতাব্দী আগে জাপান ও জার্মানীর পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে। আমাদের পক্ষে একবিংশ শতাব্দীতে তা কেন সম্ভব হবে না। আজকে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। এ সুযোগটা আমরা যদি কাজে লাগাই তা’হলে আমাদের এদেশকেও গড়ে তোলা সম্ভব। এক সময় এদেশের মানুষ দেশী-বিদেশী স্বার্থানেষী গোষ্ঠীর এ প্রচারে বিশ্বাস করতো যে আমরা যেহেতু দরিদ্র তাই অমাদের দরিদ্রই থাকতে হবে। কিন্তু এখন সবাই একবাক্যে স্বীকার করে যে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে দরকার সঠিক উদ্যোগ ও রাজনৈতিক কর্মপšহা।
আমরা আজকে যেসব সমস্যার সম্মুখীন বলে উপরে উলেখ করা হয়েছে সেসব সমস্যা বর্তমান সমাজ ও অর্থনীতির সৃষ্টি। আমাদের জাতীয় অর্থনীতির বৈশিষ্ট হলো পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতা। এদেশের সরকার আমেরিকা, জাপান, বৃটেন প্রভৃতি উন্নত দেশের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতার সুযোগ নিয়ে এসব “দাতা দেশ” নিজেদের ও ভারতের অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ভারতের বিশাল ও দ্রæত বিকাশমান অর্থনীতির সাথে আমেরিকা, জাপান, বৃটেন প্রভৃতি দেশের স্বার্থ গভীরভাবে জড়িত। তাই দাতা দেশগুলির উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে অনুন্নত ও দরিদ্র রেখে ভারতকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক স¤পদসহ সব রকমের সুবিধা দেওয়া। এটা এখন আর দেশবাসীর অজানা নয় যে, আমেরিকা ও ভারত আমাদের অতি মূল্যবান গ্যাস স¤পদ ভারতে রপ্তানি করার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও পরনির্ভর কোন দেশের সরকারের পক্ষেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব নয়। বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল আজকের বাংলাদেশ সরকার এর ব্যতিক্রম নয়। অথচ, আমরা নিজেরা আমাদের গ্যাস ব্যবহার করে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পারি। বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বালানি, শিল্প ও কৃষিতে গ্যাস ব্যবহার করে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠতে পারি। অবশ্য এজন্য বিশাল আকারে স¤পদ বিনিয়োগ করে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠতে পারি। অবশ্য এজন্য বিশাল আকারে স¤পদ বিনিয়োগ করা দরকার। বিদেশীরাও যদি নিজেদের মুনাফার স্বার্থেই গ্যাস দিয়ে এখানকার অবকাঠামো, শিল্প ও কৃষির উন্নতির জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করত তা’হলে আমরা গ্যাস রপ্তানি করার চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হইব। কিন্তু, আমেরিকা ও ভারতের উদ্দেশ্য হলো ভারতে গ্যাস রপ্তানি করে দ্রæত মুনাফা অর্জন। তাতে বাংলাদেশ গরিব থাকলে তাদের যায় আসে না। ভারত উন্নত হলে আমেরিকা, জাপান ও বৃটেনের মত ধনী দেশগুলির ব্যবসা-বাণিজ্য কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। তাই আমেরিকা, ভারত ও এখানকার স্বার্থান্বেষী মহলের যুক্তি হলো, বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ। গ্যাস ব্যবহার করার জন্য যে স¤পদ বিনিয়োগ করা দরকার সেই স¤পদ বাংলাদেশের নেই। তাই গ্যাস মাটির নীচে ফেলে না রেখে ভারতে রপ্তানি করলে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে। এটা হলো সেই যুক্তি যেটা শোষক মহাজন গরিব কৃষকের জমি গ্রাস করার জন্য দিয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে গ্যাস রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে সেটা দেশে থাকবে না। বিদেশী কো¤পানী সেই অর্থ বিদেশে পাচার করবে। আর দেশের দুর্নীতিপরায়ন শাসকরা বিদেশী ব্যাংকে নিজেদের একাউন্টে জমা রাকবে। নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে তাই হয়েছে। এদেশের শাসকরা পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিবাজ বলে পরিচিত। ফলে, একদিন যখন মাটির নীচে গ্যাস শেষ হয়ে যাবে তখন আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যাবে। আমরা তখন খালি থলে ধরে রাখব। অতএব, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে আমাদের গ্যাস ভারতে রপ্তানি না করে অবিলম্বে বিদ্যুৎ ও শক্তি (পাওয়ার), শিল্প ও কৃষি উৎপাদনের কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু, এজন্য যে স¤পদ বিনিয়োগ করতে হবে সেটা কোথা থেকে আসবে? আমেরিকা বা দাতা দেশগুলির স্বার্থে কাজ না করলে তারা নিশ্চয় আমাদের সাহায্য করবে না। অতএব, বিদেশী সাহায্য নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ হলো আত্মনির্ভরতা। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে হবে। অবশ্য ইউরোপ ও আমেরিকা যুগ যুগ ধরে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা থেকে ধনস¤পদ লুট করে নিয়ে নিজেদের দেশকে উন্নত করেছে। আমাদের জন্য সে পথ বন্ধ। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আত্মনির্ভরতাই একমাত্র পথ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কথা হলো, প্রথমতঃ শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলা। বিদ্যুৎ শক্তি (পাওয়ার), আধুণিক প্রযুক্তি, সর্বপ্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিস্কাশন, নদী শাসন, সেচ, পানি স¤পদ, মাটির উর্বরতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অন্তর্ভূক্ত। দ্বিতীয়তঃ সামাজিক অবকাঠামোর উনয়ন, অর্থাৎ শ্রমিক-কৃষক-মজুরসহ শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশে মানুষের বসবাসের উপযোগী বাসাবাড়ি, আধুণিক চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি)। দেশবাশীর স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার মান এবং সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন ছাড়া কোন দেশ আজকের যুগে উন্নত হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীর মুখে অহরহ একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার কথা শোনা যায়। কিন্তু, নড়বড়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো নিয়ে পৃথিবীর কোন দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ ধরণের বাগাড়ম্বরই। এসব কথাবার্তা সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলা হয়। অর্থনৈতিক উয়নের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক স¤পদ ও মানব স¤পদকে কাজে লাগিয়ে দেশে মজবুত অবকাঠামো, প্রচুর শিল্পকারখানা ও উন্নত কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এসবের জন্যেই বিশাল আকারে স¤পদ বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের মত একটি গরিব দেশে সেই স¤পদ বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের মত একটি গরিব দেশ সেই স¤পদ কীভাবে সংগ্রহ করবে? একটা বিষয় লক্ষ্য করলেই এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ এবং দেশের আপামর জনগণ যখন দরিদ্র তখন আমরা লক্ষ্য না করে পারিনা যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এম.পি., ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রী ও দেশের কোটিপতি ধনীরা প্রাইভেট-কার, এয়ার-কন্ডিশনার, প্রাসাদের মত বাসাবাডি, ঘর সাজাবার দামী সরঞ্জাম, চোখ ধাধানো আনন্দ উৎসব, বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা, বিদেশে বসবাস ও বিষয়-স¤পত্তি ক্রয় ইত্যাদি নিয়ে অশল্পনীয়ভাবে বিলাসী জীবন-যাপন করছে। এসব ভোগবিলাসে দেশে উৎপাদিত স¤পদ, প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা ও বিদেশী সাহায্য অপচয় ও বিদেশে পাচার হচেছ। এভাবে এক শ্রেণীর মানুষের ভোগবিলাসে যে হাজার হাজার কোটি টাকার স¤পদ অপচয় ও বিদেশে পাচার হচেছ সেই স¤পদ কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিনিয়োগ করার জন্যে স¤পদের অভাব হবে না। সরকারী ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ, আমলা ও তাদের সাথে যুক্ত ধনী ব্যক্তিরা বিভিন্ন পথে বিশেষ করে দেশের জনগণকে শোষন ও বঞ্চিত করে এবং দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যে বিশাল ধনস¤পদের অধিকারী হয়ে থাকে সেটা ভোগবিলাসে অপচয় ও বিদেশে পাচার হয়। স¤প্রতি ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি সংস্থার রিপোর্টে উলেখ করা হয়েছে, দুর্নীতির কারণে ২০০০ সালের প্রথম ৬ মাসে সরকারের ১১ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষতি সরকারের নয়, জনগণের হয়েছে। এদেশে বড় আকারের দুর্নীতির সাথে সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু কওে মন্ত্রী, আমলা, এম.পি. ও দেশের বড় ধনীরা জড়িত থাকে। এ দুর্নীতিবাজরা দেশের উৎপাদিত স¤পদ, প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা ও বিদেশী সাহায্য আত্মসাৎ করে। এদের দুর্নীতি প্রমাণ করা কঠিন। দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা এতই ক্ষমতাধর যে, তাদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও অসম্ভব। তাছাড়া প্রশাসনের সর্ব স্তরেই ব্যাপক দুর্নীতি লক্ষ্য করা যায়।(এদেশে ছোট আকারের দুর্নীতিও আছে। যেমন, ভোট বিক্রি, অফিস-আদালতে ছোট কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি। বাঁচার তাগিদে এই দুর্নীতি। কারণ সৎভাবে বাঁচার পথ বন্ধ। যখন মানুষ সৎভাবে বাঁচার সুযোগ পাবে তখন ছোট আকারের দুর্নীতি থাকবে না।) বড় দুর্নীতিবাজরা আদালতে হাজির না হলেও ছোট ’দুর্নীতিবাজদের’ ঠিকই আদালতের কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হয়। এ অবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর ব্যবস্থা হলো ভোগবিলাস ও বিদেশে স¤পদ পাচার বন্ধ করা। তাহলেই দর্নীতিলব্ধ অর্থ ভোগ করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে দুর্নীতি করার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে। যে টাকা ভোগে আসে না সে টাকার কোন দাম নেই। তবে বিষয়টা শুধু দুর্নীতিলব্ধ স¤পদের ভোগবিলাসে অপচয় ও পাচার করা বা না করা নয়। দেশের বর্তমান অবস্থায় স¤পদের সকল ধরণের অপচয় ও বিদেশে পাচার বন্ধ করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল কারণ ছিল, বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের) স¤পদ পাকিস্তানে পাচার। আজও যদি স¤পদ বিদেশেই পাচার হয় তা’হলে স্বাধীনতার কী অর্থ? আর যারা দেশের স¤পদ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিদেশে পাচার করে তাদের সাথে তখনকার শাসক পাকিস্তানীদের কী পার্থক্য? বিদেশে তৈরী বিভিন্ন বিলাস সামগ্রী যেমন, প্রাইভেট-কার, এয়ার-কন্ডিশনার, ঘর সাজানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম, বিদেশী সিগারেট, মদ, বিদেশী দামী পোশাক ও প্রসাধনী ইত্যাদি আমদানি বা ভোগ পরোক্ষ স¤পদ পাচার। আর যখন বাংলাদেশী টাকাকে ডলার-পাউন্ডে পরিণত করে বিদেশে পাঠানো হয় তখন সেটা প্রত্যক্ষ পাচার। এ ধরনের স¤পদ পাচারের কিছু খবরাখবর স¤প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। সরকার সমর্থক একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, প্রধানমন্ত্রীসহ ১৫(পনর) জন মন্ত্রী, বর্তমান সংসদের সরকার ও বিরেধীদলের ৫৫ জন এম.পি., প্রাক্তন মন্ত্রী ও এম.পি.দের সন্তানেরা আমেরিকায় পড়ালেখা ও বসবাস করে। তা’ছাড়া আরও অনেক ধনীব্যক্তির সন্তানেরা বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে বিদেশে পড়ালেখা করছে। আর একটি জনপ্রিয় সাপ্তাহিকে প্রকাশিত বিবিসি’র বাংলা বিভাগের এক প্রবীণ এদেশীয় সাংবাদিকের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিগত ৫ বছরে বাংলাদেশের অন্ততঃ ১৪০ জন সরকার ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিক ও আমলা যুক্তরাষ্টের একমাত্র নিউইয়র্ক শহরেই বেশ কিছু বাড়ি কিনেছে। এদের একজন কিছুদিন আগে সরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে আমেরিকা গিয়ে বাড়ি কিনেছেন। সন্ত্রাস ও হরতালের কারণে দেশে পড়াশুনার পরিবেশ না থাকায় তার স্কুলগামী সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষার(?) জন্যই নাকি সেদেশে তার বাড়ি কেনার (ও স¤পদ পাচার করার) প্রয়োজন হয়েছে বলে ওই রাজনীতিকের ধারণা। খবর অনুযায়ী বর্তমান সরকারের একজন উর্দ্ধতন মন্ত্রী নাকি নগদ অর্থে (এক মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ পাঁচ কোটি টাকারও বেশি মূল্যে) ৩টি বাড়ি কিনেছেন নিউইয়র্কে। লন্ডনেও কিনেছেন বেশ কিছু মন্ত্রী, আমলা ও অন্যান্য ধনী ব্যক্তি। এদেশের এক ডাকসাইটে রাজনৈতিক পরিবারের এক কন্যা লন্ডেনের অত্যন্তঃ ব্যয়বহুল হ্যা¤পস্টেডের অভিজাত এলাকায় বিরাট এক বাড়ির মালিক হয়েছেন। তিনি সে দেশে চাকরি বা অন্য কিছু করেন বলে কারও জানা নেই। বিবিসি’র উক্ত সাংবাদিক ৪০ বছর লন্ডনে থেকে ভাল চাকরি করেও হ্যা¤পস্টেডের বিশেষ এলাকায় বাড়ি কেনার কথা ভাবতেও পারেননি বলে তার লেখায় উল্লেখ করেছেন। যখন আমাদের দেশ শিল্পোন্নত হয়ে উঠবে এবং দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য নিয়মিত কাজ ও কাজের বিনিময়ে মানুষের মত বাঁচার আয়ের ব্যবস্থা হবে তখন বিলাস সামগ্রীর উপর কোনরুপ বিধি নিষেধ আরোপ করার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু আজকের অবস্থায় ধনীদের বিলাসিতা মেনে নেওয়া যায় না। স¤প্রতি জাতিসঙ্গের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসকাপ) থেকে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয়-৩(তিন) হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট-কার) ব্যবহার শুরু হয়। আর এদেশে মাথাপিছু আয় ৩০০(তিনশত) ডলারে উপনীত হওয়ার আগেই রাস্তায় প্রাইভেটকারের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা যায়।
এদেশে শ্রমিক কৃষক ও মজুরের চাহিদা খুবই কম। তাদের ভোগের পরিমাণ সামান্য। তারপরও তারা কঠোর পরিশ্রম করে স¤পদ উৎপাদন করে। তাদের খাওয়া-পড়ার পর উৎপাদিত বাড়তি বা উদ্ভৃত্ত স¤পদ ধনীরা ভোগবিলাসে অপচয় ও বিদেশে পাচার করে। ফলে, এখানকার উৎপাদিত উদ্ভৃত্ত স¤পদ দেশের জনগণের উপকারে আসে না। যখন উদ্ভৃত্ত স¤পদের অপচয় ও বিদেশে পাচার বন্ধ হবে এবং দেশ ও দেশের জনগণের অবস্থার উন্নতির জন্য সেই স¤পদ কাজে লাগানো হবে তখন শ্রমিক-কৃষক-মজুর ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ প্রচন্ড উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে দেশ গড়ে তুলবে এবং বিনিয়োগের জন্য অধিক উদ্ভৃত্ত স¤পদ গড়ে তুলতে যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে পিছপা হবে না। এভাবেই দ্বিতীয মহাযুদ্ধের পর জাপান ও জার্মানীকে সেখানকার শ্রমিক-কৃষক-মজুর ও শ্রমজীবী মানুষ ধবংসতুপের নীচ থেকে গড়ে তুলেছিল। তারা সামান্য মজুরির বিনিময়ে দীর্ঘ সময় কাজ করেছে। এই অবস্থা যখন এদেশেও ঘটবে তখন বহু সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বিশ্বের অনেক দেশ সাহায্য নিয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। আজকে যখন কৃষক মজুর ও শ্রমজীবীরা দেখছে যে তাদের পরিশ্রমে উৎপাদিত স¤পদ ক্ষমতাসীনরা ও তাদের সাথে স¤পর্কিত ব্যক্তিরা ভোগবিলাসে অপচয় ও বিদেশে পাচার করছে তখন তাদের থেকে পরিশ্রম ও উৎসাহ-উদ্দীপনা আশা করা যায় না। দেশের উন্নয়ন নিয়েও তারা খুব একটা মাথা ঘামায় না।
দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত উৎপাদন যন্ত্রের(কল-কারখানা, যন্ত্রপাতি ও কৃষি উপকরণ ইত্যাদি) অভাবই আমাদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ করে রেখেছে। এসব গড়ে তোলার জন্যই বিশাল আকারে স¤পদের বিনিয়োগ দরকার। কিন্তুু দেশের সমুদয় স¤পদই যদি ভোগে শেষ হয়ে যায় তা’হলে বিনিয়োগের জন্য স¤পদ পাওয়া যায় না। যে ভোগ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না সেটা অপরিহার্য ভোগ। এ ভোগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু, ভোগবিলাসে স¤পদের অপচয় ও বিদেশে পাচার একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বন্ধ রাখতেই হবে। এটা করার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে হবে। এ বাধ্য করাটা জনগণের কাজ। এ কাজটি কীভাবে করবে সেই প্রশ্ন এবং তার উত্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার আগে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার।
অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ মানেই শিল্পোন্নত দেশ। শিল্পায়ন ছাড়া উন্নয়ন ফাঁকা কথা। দেশ শিল্পোন্নত না হলে সবার জন্য নিয়মিত কাজ ও বাঁচার মত আয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। এখন এদেশের মানুষ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বৈধ-অবৈধ পথে বিশ্বের বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশে(আমেরিকা, জাপান, জার্মানী, বৃটেন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইাঁলী রাশিয়া, প্রভৃতি) এমনকি মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মত উন্নয়নশীল দেশে পাড়ি দেয়। আমাদের নিজেদের দেশ শিল্পোন্নত হলে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এক সময় আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, জাপানসহ পৃথিবীর সব দেশই দরিদ্র ছিল। এসব দেশ শিল্পোপন্নত হয়েই নিজেদেও দারিদ্র-বেকারত্ত¡ জয় করেছেন। যেহেতু দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো শিল্পায়ন তাই শিল্পায়নের লক্ষ্য সামনে রেখেই সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। স¤পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিল্পায়নের লক্ষ্যকেই প্রাধ্যন্য দিতে হবে। দেশের শিল্পায়নের জন্য আরও যা দরকার তা’হলো, শিল্পজাত পণ্যের বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি একসময় এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার স্থানীয় শিল্প ধবংস করে ঐ বিশাল এলাকাকে নিজেদের শিল্পজাত পণ্যের বাজারে পরিণত করেছিল। এভাবে সৃষ্টি হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার নিয়মিত “বিশ্ব-বাজার”। তারা এসব দেশ থেকে সস্তায় কাঁচামাল এবং খনিজ স¤পদও নিয়ে যেত। আজ তার দরকারও নেই। আজকে আমাদের দেশই বিদেশী পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশে উৎপাদিত শিল্পজাত পণ্যের চাহিদা নেই বলে আমাদের অসংখ্য কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের জন্য আমাদেও দেশের বাজারকে ভারতসহ বিদেশী পণ্য থেকে রক্ষা করতে হবে। এরই পাশাপাশি বাজারের বিকাশ ও প্রসারের জন্য দেশের জনসাধারণের পণ্য সামগ্রী কেনার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ মুহুর্তে দেশের জনসাধারণের বিশেষ করে গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বলতে কিছু নেই। জনসাধারণকে ক্রয়ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে দেশের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ, আমলা ও কোটিপতি বিলাসী ধনীরা বিশাল ক্রয়ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। কিন্তু, তাদের বিশাল ক্রয়ক্ষমতা থেকে দেশের শিল্পকারখানা উপকৃত হয় না। উপকৃত হয় বিদেশী শিল্পকারখানা। কারণ এ শ্রেণীর মানুষের কেনাকাটার বিরাট অংশ জুড়ে থাকে বিদেশী বিলাস সামগ্রী। তাই এ শ্রেণীর কেনাকাটা থেকে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং তার বিনিময়ে বিদেশীরা লাভবান হয়। দেশের শিল্পায়নের স্বার্থে এ শ্রেণীর কেনাকাটার ক্ষমতা কমাতে হবে। অর্থাৎ অপরিহার্য ভোগের মধ্যে তাদের ক্রয়ক্ষমতা ও ভোগ সীমাবন্ধ রাখতে হবে। ইউরোপের দেশগুলি ও আমেরিকা নিজ নিজ দেশের জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে ব্যাপক আকারে শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন (মাচ প্রডাকশন) চালু করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে সেসব দেশে শিল্প উৎপাদনের অভুত পূর্ব বিকাশ ঘটেছে। আমাদের দেশে এভাবেই শিল্পজাত পণ্যের বাজার গড়ে তুলতে হবে। তার অর্থ এ নয় যে, রপ্তানি বাণিজ্যকে অবহেলা করা। রপ্তানি বাণিজ্যও দেশের শিল্পায়নের জন্য অপরিহার্য। কারণ, শিল্পায়নের জন্য অনেক কাঁচামাল ও প্রাথমিক পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। রপ্তানি ছাড়া এসব আমদানি সম্ভব নয়। কিন্তু রপ্তানির উপর নির্ভর করে পণ্য উৎপাদন (যেমন, তৈরী পোশাক ও চামড়া শিল্প) সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পলিসি হতে পারে না।
দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ হলো ভোগবিলাসে স¤পদের অপচয় ও বিদেশে পাচার বন্ধ করে বিনিয়োগ কয়েকগুন বৃদ্ধি করা এবং বিদেশী পণ্য থেকে নিজেদের বাজার সংরক্ষণ করা। এছাড়া আর কোন পথেই শিল্পায়ন সম্ভব নয়। সাধারণতঃ দেশের সরকারকেই এ কাজটা করতে হবে। কিন্তু, সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এম.পি. এবং ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতানেত্রীরা নিজেরাই যেহেতু বিলাসী জীবন-যাপন করে তাই সরকার নিজ থেকে ভোগবিলাস নিষিদ্ধ করে না। অন্যদিকে বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল সরকারের পক্ষে নিজেদের বাজার সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। যতদিন দেশের স¤পদ ভোগবিলাসে অপচয় ও বিদেশে পাচার হবে এবং দেশের বাজার বিদেশী পণ্যে সয়লাব থাকবে ততদিন পরনির্ভরতা ও পশ্চাৎপদতা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। একটা পথ হলো, বর্তমান অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতা মেনে নেওয়া। অপরটি অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আত্মনির্ভরতা। আমাদের দেশের শাসকরা ও তাদের সমর্থক বিলাসী ধনীরা নিজেদের আরাম-আয়েশের স্বার্থে পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু, দেশের জনগণ নিজেদের সুখ-শান্তি ও দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতা মেনে নিতে পারে না। জনগণকে অবশ্যই অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আত্মনির্ভরতার পথ বেছে নিতে হবে। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের আরাম-আয়েশের জন্য কোটি কোটি মানুষ দুঃখ-দারিদ্রের মধ্যে পড়ে থাকবে কেন? তাই অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতার পরিবর্তে অগ্রগতি ও আত্মনির্ভরতা অর্জনের জন্য ভোগ-বিলাসে স¤পদের অপচয় ও পাচার বন্ধ এবং বিদেশী পণ্য নিজেদের বাজার সংরক্ষণ করার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে হবে। জনগণকে ঘোষণা দিতে হবে যে, দেশ যতদিন অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও আত্মনির্ভর না হচেছ এবং সবার জন্য পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স¦াস্থ্যকর পরিবেশে মানুষের বসবাসের উপযোগী বাসাবাড়ি, আধুনিক চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি না হচেছ ততদিন সরকারকে ভোগবিলাসে স¤পদের অপচয় নিষিদ্ধ রাখতে হবে। জনগণের অপরিহার্য ভোগের চাহিদা পূরণ করার পর দেশে উৎপাদিত স¤পদ, প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা ও বিদেশী সাহায্য দিয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো, প্রচুর শিল্পকারখানা ও উন্নত কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশের বাজার ভারতীয় পণ্য ও অন্যান্য বিদেশী পণ্য থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ ঘোষণার বাস্তবায়ন ছাড়া কোন দল সরকারী ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ক্ষমতাপ্রত্যাশী প্রতিটি দলকে এই ঘোষণা দিতে হবে। ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে এটাই হবে জনগণের নির্বাচনী ঘোষণা বা ম্যানিফেস্টো।
এ ম্যানিফেস্টো সারা দেশে জনগণকেই প্রচার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সংগঠিত অংশ যেমন শ্রমিক, মজুর, কর্মচারী ও কৃষকদের সংগঠন, ব্যবসায়ী বিশেষ করে ছোট ও মাঝারী ব্যবসায়ী সমিতি, নারী সংগঠন, রিকসাচালক ও রিকসামালিকদের সংগঠন এবং দেশপ্রেমিক ছাত্র ও শিক্ষিত জনগণ যারা দেশের উন্নতি চান তাদের সবাইকে এ ম্যানিমেস্টো প্রচার করার দায়িত্ব নিতে হবে।
আজকে যেসব দল সরকারী ক্ষমতালাভের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হয় তাদেরও নির্বাচনী ঘোষণা বা ম্যানিফেস্টো আছে। কিন্তু এসব ম্যানিফেস্টো প্রকৃতপক্ষে কোন উন্নয়নের কর্মসূচী নয়। কিছু ফাঁকা অংগীকার ও মনভোলানো কথা। পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতার ম্যানিফেস্টো। যেমন, আজকে আওয়ামী লীগকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে, তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষের শক্তি। সে সময়ের স্বধীনতা সংগ্রাম ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে বের হয়ে এসে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম। তখন যারা, এ সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে তারা হলো স¦াধীনতার বিপক্ষ শক্তি। কিন্তু, স্বাধীনতা সংগ্রামের সফল পরিণতিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পতন ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের কয়েক যুগ পর সেই সময়ের আলোকে আজও স্বাধীনতার পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি বলতে কিছু থাকতে পারে না। তারপরও স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির ভিত্তিতে রাজনীতি করার উদ্দেশ্য দেশের বর্তমান সমস্যা আড়াল করে ফাঁকা কথা বলে ক্ষমতা ধরে রাখা বা ক্ষমতায় যাওয়া। এই প্রসংগে একটা বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দুই শক্র দেশ ফ্রান্স ও জার্মানী ইউরোপের আরও চারটি দেশ নিয়ে যুদ্ধের মাত্র ১২ (বার) বছর পর (১৯৫৭ সালে) সাধারণ বাজার গঠন করেছিল। তারাই পরবর্তীকালে গঠন করেছে বর্তমান ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ বা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন(ই-ইউ)। আমেরিকা ও ভিয়েতনাম ছিল পর¯পরের শক্র। তারা ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ২১ বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে। অবশেষে আমেরিকা যুদ্ধে পরাস্ত হয়। এখন এ দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ স¤পর্ক গড়ে তোলার জন্য উভয় দেশের নেতারা খুবই আগ্রহী। আর বাংলাদেশের সরকারী দল স্বাধীনতার কয়েক যুগ পরও অতিতের মধ্যে বাস করছে। এরা এক ধরণের বিকারগ্রস্থ মানসিকতা।
আজকে অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতারই আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রধান হুমকি। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ ও পরনির্ভর থাকাই পরাধীনতা। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ৪-দলীয় জোটের দলগুলি জাতীয়তাবাদ ও ভারত বিরোধিতার কথা বলে। কিন্তু, এ ফাঁকা জাতীয়তাবাদ ও ভারত বিরোধিতার উদ্দেশ্য অসচেতন জনগণকে বোকা বানিয়ে সা¤প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। তাই, এ জোট বাংলাদেশের বাজারকে ভারতীয় পণ্য থেকে সংরক্ষণ করার জন্য কোন কার্যকর কর্মসূচী দেয় না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, বিএনপি সরকার ও সেই সরকারের অর্থমন্ত্রীর পলিসির কারণেই বাংলাদেশ ভারতে উৎপাদিত পণ্যে সয়লাভ হয়ে গিয়েছে। একথা মিথ্যা বলা যাবে না। বিএনপি সরকারের আমলেই এদেশ ভারতীয় পণ্যে সয়লাভ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, মজার ব্যাপার হলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এাঁকে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য খারাপ জেনেও বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় পণ্য হটাবার জন্য তার শাসনামলে কিছুই করেননি। তাই প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যও ফাঁকা এবং একটা রাজনৈতিক চাল ছাড়া কিছুই নয়। এভাবে দেশের ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলি জনগণকে বোকা বানায়। কিন্তু, একটা দেশের জনগণ কি চিরকাল বোকা থাকে? কিছু মানুষকে হয়তো চিরকাল বোকা বানিয়ে রাখা যায় কিন্তু দেশের সব সব মানুষকে চিরকাল বোকা বানিয়ে রাখা যায় না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে কথার পার্থক্য ছাড়া মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। এ দলগুলির ঝসড়া বিবাদ ও হানাহানির কারণ ক্ষমতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব, এসব দল দেশকে অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরতা থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও পরনির্ভরতার লক্ষ্য নিয়ে যেতে পারবে না। যদিও ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিটি দলই দাবি করে যে, জাতীয় অর্থনীতির অভাবনীয় বিকাশ হচেছ। এ বক্তব্যেও পক্ষে তারা বিভিন্ন তথ্য হাজির করে। যেমন, আগের তুলনায় মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে গেছে। এ গড় আয় প্রকৃত উন্নয়নের কোন মাপকাঠি নয়। এ থেকে এটা প্রমাণিত হয় না যে দেশের আপামর জনগণ সেই আয়ের ভাগীদার। অথবা এই ‘উন্নতি’ দেশকে আত্মনির্ভর ও উন্নত করেছে। এই ফাঁকা উন্নতি ধনীদের আরও ধনী এবং দেশকে আর পরনির্ভর করেছে। এই উন্নয়ন জনগণের উন্নয়ন নয়, বিলাসিতার উন্নয়ন। তাই, গড় আয় বৃদ্ধি সত্তে¡ দেখা যায় যে, বেকার সমস্যা ক্রমেই তীব্র হচেছ। গরিবদের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচেছ। দেশ অনুন্নতই রয়ে গেছে। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সংস্থা আংকটাডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বর্তমান দরিদ্র অবস্থা থেকে উন্নত অবস্থায় পৌঁছতে বাংলাদেশকে অন্ততঃ আরও ৫০ বছর(?) অপেক্ষা করতে হবে। ১২ অক্টোবর ২০০০ সালে জেনেভাস্থ জাতিসংঘের দপ্তর থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। আংকটাড আরও বলেছে যে, দেশের অধিকাংশ মানুষ মাসে ২ ডলার আয়ের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। (দেশবাসী লক্ষ্য করুন এদেশের একজন বিলাসী ধনী দিনে কী পরিমাণ স¤পদ ভোগবিলাসে অপচয় করে)।
এদেশে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলি মুখে যাই বলুক না কেন তারা বিলাসী ধনীদের সেবা করে। বিলাসী ধনীরা এসব দলের জন্য অর্থ যোগায়। বিলাসী ধনীদের সেবা এসব দলের নেতা-নেএীরাও বিশাল ধনস¤পদের অধিকারী হয়ে বিলাসী ধনীদের মতো জীবন-যাপন করে। প্রকৃতপক্ষে এদেশে জনগণের দল বলতে কিছু নেই। বিলাসী ধনীদের অর্থ সাহায্য নিয়ে যে দল গড়ে উঠে ও পরিচালিত হয় সে দল কখনও জনগণের দল হতে পারে না। জনগণকেই অর্থ ও জনবল দিয়ে নিজেদের দল গড়ে তুলতে হবে এবং তা’হলেই জনগণ সেই দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। দল গঠনের জন্য জনগণের এ ধরণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এখন পর্যন্ত এদেশে সে রকম দল গড়ে উঠেনি। বিলাসী ধনীদের দলগুলিই বিশাল টাকা-পয়সা খরচ করে নির্বাচন করে ও সরকারী ক্ষমতায় যায়। এরা আজকে কারও অজানা নয়। এটা খুবই অবাক কথা যে তারপরও জনগণ বিলাসী ধনীদের দলগুলিকে ভোট দেয় এবং এসব দলের সভায় গিয়ে হাজির হয়। এর কারণ, জনগণ দেখে যে এসব দলের বাইরে তেমন আর কোন দল নেই। তাই, এসব দলের মধ্য থেকেই কোন একটা দল বা জোটকে ক্ষমতায় পাঠাতে হবে। জনগণের এ ধারণা বর্তমান সময়ের জন্য ভুল বলা যাবে না। তবে আজকে জনগণকে যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো-এসব দল থেকেই জনগণের এ ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি আদায় করা। তারপরই জনগণ এসব দলকে ভোট দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে। এটা ছাড়া কোন দলকে ভোট দেওয়ার অর্থ ৫বছরের জন্য দেশের ধনস¯পদ ভোগবিলাসে অপচয় এবং বিদেশে পাচার করার লাইসেন্স দেওয়া। এ নির্বাচন ও গণতন্ত্রের অর্থ হল ৫ বছর অন্তর অন্তর দেশের স¤পদ অপচয়কারী ও পাচারকারীদের ভোটে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসানো। এদেশে যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয় তারা নির্বাচন উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ বা কোটি টাকা খরচ করে কেন? এসব দলের প্রার্থীরা কী উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ বা কোটি টাকা খরচ করে সেটা বুঝতে আর কারও বাকী নেই। ভোটে নির্বাচিত হয়ে বা ক্ষমতায় গিয়ে যত টাকা খরচ হয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা আত্মসাৎ করা। শাসকদের এ মনোবৃত্তি দেশব্যাপী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছে। সন্ত্রাস ও গণতন্ত্র পাশাপাশি চলতে পারে না। রাতারাতি ধনী হওয়ার আকাঙক্ষাই সন্ত্রাসের প্রকৃত কারণ। শাসকরা যে ধনস¤পদের অধিকারী হয়েছে সেটা রক্ষা করার জন্য সন্ত্রাসীদের দলে টেনে আনা হয়। তাই ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল বা আখড়া। সা¤প্রতিক ঘটনাবলী কি তাই প্রমাণ করে না? সন্ত্রাসের আরও একটা উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে ’পাশ’ করা এবং গরিব জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও তাদের মিছিল মিটিংয়ে নিয়ে গিয়ে দলের শক্তি প্রদর্শন করা। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ থেকে সন্ত্রাস দূর হবে না। যখন শাসকদের দেশের স¤পদ আত্মসাৎ ও ভোগ করতে দেওয়া হবে না অথবা দুর্নীতিলব্ধ অর্থ ভোগ ও বিদেশে পাচার করতে হলে শাসকদের লি®পা ও লালসা থেকে দেশের স¤পদ রক্ষা করতে হবে। এ দায়িত্ব সংগঠিত জনগণকে পালন করতে হবে। সংগঠিত জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলি থেকে এ অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রæতি আদায় করতে হবে যে তারা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেরা ভোগবিলাস করবে না, ভোগবিলাস নিষিদ্ধ করবে ও স¤পদের পাচার বন্ধ করবে।
জনগণের এই ম্যানিফেস্টো প্রচার ও বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সংগঠিত জনগণকেই প্রথম উদ্দ্যোগ নিতে হবে। দেশের শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী, মজুর, রিকসাচালক, রিকসামালিক, ব্যবসায়ী বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সমিতি, নারী সংগঠনসহ অন্যান্য গণসংগঠনগুলি থেকে এ ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়ন করার দাবিতে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে। এ কাজটি করা হলে দেশের কোন রাজনৈতিক দল জনগণকে উপেক্ষা বা বিভ্রান্ত করতে পারবে না। আর ম্যানিফেস্টো সংগঠিত জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রধান দায়িত্ব দেশপ্রেমিক ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর। পৃথিবীর সব দেশেই দেশপ্রেমিক ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জনগণকে পথ দেখায়। এখানকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জনগণকে পথ দেখায়নি। এখানকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ব্যাপক অংশ রাজনীতিকে ঝামেলা মনে করে ও রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। অথচ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোন দেশ উন্নত হতে পারে না। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সুবিধাবাদী একটা ক্ষুদ্র অংশ নিজেদের উন্নতির স্বার্থে ও সুযোগ-সুবিধা পাবার আশায় বড় দলগুলির তোষামোদি করে। বিলাসী জীবন-যাপন তাদের উদ্দেশ্য। তারপরও এটা আশা করা যায় যে, শিক্ষিতদের মধ্যে যারা আন্তরিকভাবে দেশের উন্নয়ন এবং দুঃখ-দারিদ্র থেকে জনগণের মুক্তি কামনা করেন তারা সব পিছুটান ও দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে এই ম্যানিফেস্টোর গুরূত্ব স¤পর্কে জনগণকে সচেতন এবং অসংগঠিত জনগণকে সংগঠিত করে তুলতে এগিয়ে আসবেন। একটা দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যখন নিজেদের ও নিজ শ্রেণীর উচ্চাকাঙক্ষা দ্বারা আচছন্ন থাকে তখন সেদেশের অসচেতন জনগণ রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রতারিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে তাই হয়ে আসছে।
জনগণের এ ম্যানিফেস্টোর মূল কথা হলো, জনগণ বলে দেবে সরকারকে কী করতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার বিলাসী ধনীদের সেবা করতে পারবে না। এঁটাই গণতন্ত্র। এ ম্যানিফেস্টো যখন বাস্তবায়িত হবে এবং তার পরিণতিতে দেশ আত্মনির্ভর ও শিল্পোন্নত হয়ে উঠবে তখন সমাজে একটা আমূল পরিবর্তন আসবে। যে পরিবর্তনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো এদেশের জনগণ আর বিলাসী ধনী ও তাদের স্বার্থের পাহারাদার রাজনৈতিক দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। এ ম্যানিফেস্টো কার্যকর হলে মানুষ নিজেদের সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। তখন মানুষ প্রকৃত অর্থে সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফ-উল-মখলুকাত হয়ে উঠবে। এ ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়িত হলে পৃথীবীতে আমাদের মিসকিন বা ভিক্ষুক জাতির পরিচয় ঘুচে যাবে। সমাজ থেকে সন্ত্রাস দূর হবে। অরাজকতা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা দূর হবে। শিল্পোৎপাদনের মধ্যে দিয়ে জাতি সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবে যেমন, ইউরোপ-আমেরিকা, জাপান ও অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের জনগণ হয়েছে। মানুষে মানুষে যে ব্যবধান ও বৈষম্য বিরাজ করছে তা দূর হবে। মানুষে মানুষে দুই ধরণের বৈষম্য দেখা যায়। একটা হলো, জন্মগত বা আল্লাহ প্রদত্ত বৈষম্য। দুইজন মানুষ কদাচিত একরকম হয়। কিন্তু এ স্বাভাবিক বৈষম্য ১৯/২০ এর বৈষম্য। এ বৈষম্য সমাজকে সুষম ও সুন্দর করে তোলে। তবে কিছু মানুষতো আছে যারা অসুবিধা (অন্ধ, বধির, ল্যাংড়া, পঙ্গু, মানসিক প্রতিবন্ধী ইত্যাদি) নিয়ে জন্মায়। এটা ব্যতিক্রম। এসব মানুষকে দেখার দায়িত্ব ধনী পরিবার নিজেদের আরাম-আয়েশ ও ভোগবিলাসে লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি টাকা খরচ করে তখন দেশের শতকরা ৯০টি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে, লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘিঞ্জি বস্তি ও নোংরা মহল্লায় পশুর মত গাদাগাদি করে রাত কাটায় এবং শতকরা ৮০ জন নরনারী পুষ্টিকর খাদ্য, আধুনিক চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, গরিব মহিলা ও ছেলেমেয়েরা বাসায় ঝি-চাকরের কাজ করে, অভাব অনটনে জর্জরিত কিশোরীরা বেশ্যা বৃত্তি বেছে নেয়, অগণিত মানুষ ভিক্ষা করে বেঁচে থাকে। এ অন্যায় বৈষম্য আলাহ প্রদত্ত নয়। স্বার্থপর শাসক ও বিলাসী ধনীদের সৃষ্টি। এ অন্যায় বৈষম্য যারা সৃষ্টি করেছে তারা অপরাধী। এ বৈষম্য মেনে নেওয়াও এক ধরণের অপরাধ। এ অন্যায় বৈষম্য দূর করাই এ ম্যানিফেস্টোর লক্ষ্য।
জনমুক্তি পার্টির ২২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মাহমুদ জামাল কাদেরী কর্তৃক প্রকাশিত এবং ২০/২৫ নর্থ-সাউথ রোড, হাবিব মার্কেট (৫ম তলা), সিদ্দিক বাজার, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রচারিত। ১ জানুয়ারি, ২০০১ সাল, বাংলা ১৮ পৌঁষ, ১৪০৭ সাল। এ বক্তব্যের সাথে আমি একমত বলে আমার বই-এ তুলে ধরা হলো।