সত্য- ন্যায়ের পথে অকুতোভয় সাহসী সৈনিক ছিলেন জাকির হোসেন আলমগীর ভাই

জাকিরভাই তার সমহীমায় উদ্ভাসিত । তিনি নেই সেটি বিশ্বাস হচ্ছে না, দেহ তার চলে গেলেও তিনি আছেন আমাদের মাঝে আছেন কাজের মাধ্যমে । ১ নভেম্বর ১৯৪৮ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সময়কাল খুব লম্বা একটি সময় নয় । ৭৪ বছর বয়স বাংলাদেশের গড় আয়ু থেকে ২বছর বেশি ।
তাঁর নাম শুনেছি স্কুল জীবনে , শুধু প্রশ্ন করেন । কেন এর খুজেন, কেন এর উত্তর আসলে কেউ জানে না ; যখন বিজ্ঞান কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না , তখন সামনে আসে সৃষ্টিকথা বা ধর্ম সব জানে । তিনি ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি । তার মতো একজন সৎ ও ভালো মানুষ আমি আমার এ জীবনে আমি এখনও পাইনি, হয়তো আছে, আমার সাথে পরিচয় হয়নি । কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি তাঁর অনুরাগ না থাকলেও কিন্তু ধর্মের প্রতি বিরুপ কোন কিছু বলেছেন আমি শুনেনি ।
তাকেঁ দেখেছি খুব কাছ থেকে , হয়তো আরও অনেকে দেখেছেন । তিনি ছিলেন আমার বড় ভাইয়ের থেকেও বেশি এবং আত্মার আত্মীয় এবং পরম বন্ধু । আমাকে বিশ্বাস করতেন একবারে অন্ধভাবে , আমি তাঁর সাথে কোনদিন অবিশ্বাসের কাজ করেনি । তাঁর কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে সত্যকে ভালবাসা যায় ।
তিনি ছিলেন গরীব মানুষের পক্ষের শক্তি । তিনি যা বলতেন তা-ই বিশ্বাস করতেন । আজকের সমাজে এমন ব্যক্তি পাওয়া খুবই দুষ্কর । সত্যকে তিনি ভালোবাসতেন খুবই নগ্নভাবে ও সত্য বলতে কখনও দ্বিধা করতেন না , সত্য বলাতে অনেকেই তার থেকে দূরে সরে গেছেন ; আবার স্বার্থের জন্য বা কোন কাজের জন্য আবার ফিরে এসেছেন তিনি যখনই যা বলেছেন, তার ব্যক্তির স্বার্থের জন্য বলেননি । বলেছেন সামষ্টিক স্বার্থের জন্য । সে যতো ক্ষমতাধরই হোক । কারো কাছ কিছু পাওয়ার লোভ তাঁর মধ্যে কখনও দেখা যায়নি । কিন্তু তাঁর কাছ থেকে নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে অনেককে আসতে দেখেছি ।
তিনি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন , তার একটি খাতা বা ডায়রী ছিল, সেখানে যখনই যিনি যে কোন কাজে আসতেন বা এমনই আসতেন তখনই তার ঠিকানা লিখে রাখতেন । তিনি সত্য কথা বলে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন । কিন্তু তার সামনে বলার মতো সাহস কাউকে দেখেনি । তিন আমৃত্যু সত্য বলে গেছেন ,
“ আমার কিছু কথা “ সেখানে বলেছেন চাকুরী জীবন মানে বড় চাকর ও ছোট চাকর । যদিও বলা হয় সদা সত্য কথা বলিবে . কথাটি হলো কিতাবী কথা ও বলতে বলা লাগে । আমার বক্তুতা বলিও যৌতুক নেওয়া যাবে না , কিন্তু আমার জীবনে অনেক উচ্চ শিক্ষিত এবং সরকারের উচ্চ পদের চাকুরী করে এমন ব্যক্তিকে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছে , আবার তাঁরা স্ত্রীকে নির্যাতন করার তথ্যও জানা আছে ।
আমাকে জাকির ভাই মোভিভেশন করেছে যৌতুক না নিয়ে বিয়ে করা । আসলে সত্য বলা এবং জীবনে প্রয়োগ করা খুবই কঠিন কাজ । “সত্য যে কঠিন কঠিন ভালোবাসিলাম” যিনি বলেছেন তাঁর জীবনেও নানা ঘটনা -অঘটনা জানা যায় । নীরদ সি চৌধুরী লিখেছেন “ আত্মঘাতী বাঙ্গালী “ । জাকির ভাইকে যাঁরা চিনেন ও জানেন তারা কেউ বা তাঁর শত্রুও, আমার জানা মতে তাঁর শত্রু আছে কিনা আমার জানা নেই , বলতে পারবে যে জাকির ভাই কথা ও কাজে ঠিক নেই ।
জাকির ভাইয়ের মধ্যে আমি দেখেছি আহমদ ছফাকে এবং অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ছায়া । যদিও তাদেঁর মতো বিখ্যাত ছিলেন না । জাতীয় অধ্যাপক আব্দর রাজ্জাক এর কোন রচনা বা কোন লিখিত ডকুমেন্ট নেই । অধ্যাপক রাজ্জাক ইংল্যান্ড থেকে তাঁর পিএইচডি থিসিস জমা না দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তার সুপারভাইজার ছিলেন বিখ্যাত অধ্যাপক ল্যাস্কি , তার মৃত্যের হওয়াতে আব্দুর রাজ্জাক তার পিএইচডি শেষ করেননি । কিন্তু অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, যতদিন বাংলাদেশে থাকবে ততদিন তিনি মানুষের মাঝে বেচে থাকবেন । অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন যে, পদে বড় না হয়ে গুণে বড় হতে হবে ।
জাকির ভাই তাঁর স্কুল জীবন শুরু করেছেন রুপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় দিয়ে কিন্তু কলেজ জীবন শেষ না করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী জীবনে প্রবেশ । পরিবারের একজন অভিভাবক এবং ভাইদের বড় হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নিমোর্হভাবে । অবসরে গিয়েছেন ডেপুটি রেজিস্টার হিসেবে । নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে লিখেছেন ১৭টি বই । বইগুলোর হয়তো সাহিত্য মূল্য নেই । কিন্তু ভেলানগরের গ্রামের ইতিহাস বইটি সুদূর আমেরিকাও গিয়েছে । যার প্রয়োজন তিনিই সেই বইটি সংগ্রহ করবেন । তিনি গবেষনা করতে ভালবাসতেন । তার প্রতিটি বইয়ের সন তারিখ দিয়েই বই রচনা করেছেন । “বাংলাদেশের তারিখ” বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা , কেয়ার টেকার সরকার ( ১৯৯৬-) । শুধূ তারিখ দিয়ে , প্রতিটি দিনের কথা লিখেছেন ২ খন্ডের বই । যেহেতু জাকির বিখ্যাত কেউ নয় , তাই অনেকে মনে করেন , তার বই য়ের সাহিত্য মূল্য নেই । কিন্তু সময় এবং ইতিহাস বলে দিবে জাকির বইয়ের আবেদন দীর্ঘদিন থাকবে । যতদিন ভেলানগর থাকবে বা বাংলাদেশ থাকবে । নতুন কোন গবেষক যখন ভেলানগর নিয়ে গবেষণা করবেন তখনই তার বইসমূহ এর প্রয়োজণীয়তা দেখা দিবে ।
বাঞ্ছারামপুর কল্যাণ সমিতি, ঢাবি এর কর্মচারী সমিতি এবং ভেলানগর সমিতি এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রাজনৈতিকভাবে সচেতনে একজনব্যক্তি । তাঁর বিভিন্ন লেখায়ও বলেছেন যে, “ জনমুক্তি” পার্টির সাথে আমৃত্যৃ যুক্ত ছিলেন ।আজীবন গরীব মানুষের মুক্তির কথা বলে গেছেন । দেশের মানুষের মুক্তি হয়েছে কি হয়নি
পরিশেষে তার আত্মার মারগেরাত কামনা করছি ।
মো: আবুল কালাম আজাদ
ভেলানগর,মধ্যপাড়া, হাজীবাড়ি।
ও
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার,
নরসিংদী সদর, নরসিংদী।